জেনেনিন মাইক্রোওয়েভ কি বা মাইক্রোওয়েভ কাকে বলে (What is Microwave in Bangla), মাইক্রোওয়েভ এর বৈশিষ্ট্য, প্রকারভেদ, সুবিধা এবং অসুবিধাসমূহ।
মাইক্রোওয়েভ কি ? (What is Microwave in Bangla)
300 MHz থেকে 300 GHz ফ্রিকুয়েন্সিতে পাঠানো বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় তরক্তোর নাম মাইক্রোওয়েভ।
মাইক্রোওয়েভ একমুখী এবং ছোট আকারের কেন্দ্র যায়। এজন্য প্রেরক ও গ্রাহক অ্যান্টেনাকে পরস্পরমুখী করে সাজাতে হয়।
এতে সুবিধা হলো এক জোড়া গ্রাহক ও প্রেরক অ্যান্টেনা অন্য কোন অ্যান্টেনার সাথে সংঘর্ষ না ঘটিয়ে তথ্য আদান-প্রদান করতে পারে।
এই ফ্রিকুয়েন্সিতে তরঙ্গ দৈর্ঘ্য খুব ছোট হওয়ায় একে মাইক্রোওয়েভ নাম দেওয়া হয়েছে। এর ফ্রিকোয়েন্সি রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি থেকে অনেক বেশি হওয়ায় পারফরমেন্স ও গতি বেশি পাওয়া যায়।
মাইক্রোওয়েভ যোগাযোগের প্রধান অসুবিধা হচ্ছে ট্রান্সমিটার ও রিসিভারের মধ্যে কোনো বাধা থাকতে পারবে না। কারণ এইরূপ সংকেত বিল্ডিং বা কোনো বাধা ভেদ করতে পারে না।
মাইক্রোওয়েভ পাঠানোর জন্য প্রেরক ও প্রাপক দৃষ্টি রেখার মধ্যে থাকতে হয়। প্রেরক ও গ্রাহকের দূরত্ব বেশি হলে অ্যান্টেনা অনেক উঁচুতে উঠানো লাগে।
মাইক্রোওয়েভ যোগাযোগের আরও অসুবিধা হলো যে, এই ফ্রিকোয়েন্সিতে তরঙ্গ বৃষ্টিতে দুর্বল হয়ে যায়। রেডিও ফ্রিকোয়েন্সিতে এই সমস্যা দেখা যায় না।
মাইক্রোওয়েভের বৈশিষ্ট্য
- মাইক্রোওয়েভ সিস্টেম মূলত দুটি ট্রান্সসিভার (Transceiver) নিয়ে গঠিত। এর একটি সিগনাল ট্রান্সমিট (Transmit) করার কাজে এবং অন্যটি সিগনাল রিসিভ (Receive) করার কাজে ব্যবহৃত হয়।
- মাইক্রোওয়েভ সিস্টেমে ব্যবহৃত অ্যান্টিনা বড় কোনো ভবন বা টাওয়ারের উপর বসানো হয় যাতে সিগনাল বাধাহীনভাবে বেশি দূরত্বে পাঠানো যায়।
- মাইক্রোওয়েভ বাঁকা পথে চলতে পারে না।
অবশ্যই পড়ুন:
- কিভাবে ইউটিউব থেকে টাকা আয় করা যায় ?
- ফ্রিল্যান্সিং কি এবং ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার গাইডলাইন
- রেডিও ওয়েভ কি ? রেডিও ওয়েভ এর প্রকারভেদ, বৈশিষ্ট্য এবং ব্যবহার
মাইক্রোওয়েভ ট্রান্সমিশন দু ধরনের। যেমন:
টেরেস্ট্রিয়াল মাইক্রোওয়েভ (Terrestrial Microwave)
টেরেস্ট্রিয়াল মাইক্রোওয়েভ ট্রান্সমিশনে লাইন অফ সাইট ট্রান্সমিশন ঘটে থাকে। এ ধরনের প্রযুক্তিতে ভূ-পৃষ্ঠেই ট্রান্সমিটার ও রিসিভার বসানো হয়।
ট্রান্সমিটার ও রিসিভার দৃষ্টি রেখায় যোগাযোগ করে। মাঝখানে কোনো বাধা না থাকলে টেরেস্ট্রিয়াল মাইক্রোওয়েভ ট্রান্সমিশন সিগনাল ১ থেকে ৫০ মাইল পর্যন্ত যেতে পারে।
টেরেস্ট্রিয়াল মাইক্রোওয়েভ ট্রান্সমিশনের বৈশিষ্ট্যসমূহ
- অল্প দূরত্বের জন্য এ পদ্ধতি ব্যবহার করতে চাইলে খরচ তুলনামূলকভাবে কম। কিন্তু বেশি দূরত্বের জন্য করতে গেলে বেশ ব্যয়বহুল হয়ে দাড়ায়।
- এ ট্রান্সমিশন লাইন অব সাইট ব্যবহার করে বলে ইনস্টলেশন কঠিন হয়ে দাড়ায়। ইনস্টলেশনের সময় নিশ্চিত করতে হবে যে দুই অ্যান্টেনার মাঝে কোনো বাধা নেই বা ভবিষ্যতে থাকবে না।
- ব্যবহৃত ফ্রিকোয়েন্সি, সিগনাল ও অ্যান্টেনার আকারের উপর নির্ভর করে বিভিন্ন মাত্রার এটিনিউয়েশন দেখা দিতে পারে। কুয়াশা, বৃষ্টি ইত্যাদিও সিগনাল ট্রান্সমিশনে বাধা হয়ে দাড়ায়।
- মাইক্রোওয়েভ ট্রান্সমিশনে ইএমআই প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেই। সে কারণে এই ট্রান্সমিশন ইত্তসড্রপিত্তের শিকার হতে পারেজটা সুরক্ষিত রাখা এর পাশাপাশি আবহাওয়ার কারণেও মাইক্রোওয়েভ ট্রান্সমিশন বিঘ্নিত হতে পারে।
স্যাটেলাইট মাইক্রোওয়েভ (Satellite Microwave)
স্যাটেলাইট বা উপগ্রহ মহাকাশে থেকে পৃথিবীকে প্রদক্ষিন করে। পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ বলের কারণে এটা ঘুরে, তাই এটাকে মহাকাশে রাখার জন্য কোনো জ্বালানী বা শক্তি খরচ করতে হয় না।
কারণ স্যাটেলাইটে মাইক্রোওয়েতের ইলেকট্রনিক সার্কিটগুলো চালানোর জন্য সোলার পাওয়ার ব্যবহত হয়।
পৃথিবী থেকে মনে হবে সেটা বুঝি কোরেশের তোর জিও স্টেশনারি স্যাটেলাইট রামছে যাই পরামর সাংরালাইট ৩৬,০০০ (২২,৩৬৯,৩৬৩ মাইল) কিলোমিটার উপরে একটা নির্দিষ্ট কক্ষপথে রাখতে হয়।
তথ্যমতে এ পথ পাড়ি দিতে সময় লাগে ৯-১৯ দিন।
প্রতিটি স্যাটেলাইট হলো প্রাপক প্রাপক এন্টেনা (Receiver Antenna), প্রেরক (Transmitter), প্রেরক এন্টেনা (Transmitter Antenna) এই ইলেকট্রিক্যাল যন্ত্রগুলো চালানোর জন্য প্রয়োজন পাওয়ার (Power), যা সোলার প্যানেলের মাধ্যমে জেনারেশন করা হয়ে থাকে।
পৃথিবীতে অবস্থিত এই স্টেশনগুলোতে শক্তিশালী এন্টেনা থাকে যার নাম VSAT (Very Small Aperture Terminal)।
আকাশে একবার জিও স্টেশনারি স্যাটেলাইট বসানো হলে পৃথিবীর একপ্রান্ত থেকে প্রেয়ে যন্ত্র সেকেন্ডে প্রায় ৬০০ কোটি বা তার কাছাকাছি বার কম্পন বিশিষ্ট মাইক্রোওয়েভ সংকেত স্যাটেলাইটে পাঠায় স্যাটেলাইটে পাঠানোর পর এই সংকেত অত্যন্ত ক্ষীণ হয়ে পড়ে।
স্যাটেলাইটে অনেকগুলো ট্রান্সপোন্ডার থাকে। এই ট্রান্সপোন্ডার ক্ষীণ সংকেতকে অ্যামপ্লিফায়ার এর মাধ্যমে অ্যামপ্লিফাই করে ৪০০ কোটিবার কম্পন বিশিষ্ট সংকেতে পরিণত করে পৃথিবীর গ্রাহক যন্ত্রে ফেরত পাঠায়।
এভাবে দুইটি VSAT এর মাধ্যমে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়। VSAT এর অ্যান্টেনাকে এমন দিকে রাখতে হয় যাতে তা সবসময় স্যাটেলাইটের দিকে নির্দেশ করে থাকে।
স্যাটেলাইটগুলো অনেক দূরে অবস্থিত থাকার কারণে অধিক শক্তিতে বিদ্যুত চৌম্বকীয় তরঙ্গ বিকিরণ করতে হয়। স্যাটেলাইট একটি মাইক্রোওয়েভ রিপিটার হিসাবে কাজ করে।
এধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থায় পৃথিবীতে অনেকগুলো মাইক্রোওয়েভ প্রেরক বা গ্রহীতা থাকে। এ ধরনের ট্রান্সমিশনে ল্যানের কোনো কম্পিউটার ক্যাবলের মাধ্যমে সিগনাল পাঠায় অ্যান্টেনা বা স্যাটেলাইট ডিশের কাছে আর স্যাটেলাইট ডিশ সেই সিগনাল বীম পাঠায় পৃথিবীর অক্ষে অবস্থিত স্যাটেলাইটের নিকট।
সেই স্যাটেলাইট তখন ভূপৃষ্ঠের অন্য কোনো স্যাটেলাইট ডিশের নিকট পাঠিয়ে দেয়। গন্তব্য স্যাটেলাইট ডিশ যদি পৃথিবীর অন্যপ্রান্তে থাকে কিংবা স্যাটেলাইট থেকে সরাসরি সেটিকে দেখা না যায় তাহলে সেই স্যাটেলাইট ওই সিগনালকে অন্য স্যাটেলাইটের নিকট পাঠিয়ে দিতে পারে।
দ্বিতীয় স্যাটেলাইট যদি গন্তব্য স্যাটেলাইট ডিশকে দেখতে পায় তাহলে সেই সিগনালকে গন্তব্যে পৌঁছে দেয়।
স্যাটেলাইট মাইক্রোওয়েভ ট্রান্সমিশনের বৈশিষ্ট্য
- এতে বেশ উচ্চমাত্রার ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহৃত হয়। এর ফ্রিকোয়েন্সি সাধারণত ১১ থেকে ১৪ গিগাহার্টজ হয়ে থাকে।
- স্যাটেলাইট মাইক্রোওয়েভ ট্রান্সমিশনের ব্যয় অত্যাধিক। খুব বড় ধরনের নেটওয়ার্ক না হলে এবং একান্তই দরকার না হলে এ ধরনের নেটওয়ার্ক কেউ ব্যবহার করে না। তবে স্যাটেলাইট ট্রান্সমিশনের মাধ্যমে যে কভারেজ দেয়া যায় সেখানে ক্যাবল ইনস্টল করতে গেলে অনেক গুণ বেশি ব্যয় হবে।
- এ ধরনের ইনস্টলেশন সত্যিই বেশ কঠিন এবং এটি কেবল বহু বছরের অভিজ্ঞ লোকের হাতেই দেয়া যেতে পারে।
- এটি এটিনিউয়েশনের শিকার হতে পারে। কুয়াশা, বৃষ্টি ও প্রতিকুল আবহাওয়া এই ট্রান্সমিশনকে বিঘ্নিত করতে পারে।
- এ ট্রান্সমিশনে ইএমআই প্রভাব ফেলে এবং এতে ইভসড্রপিঙের সম্ভাবনা থাকে।
স্যাটেলাইট মাইক্রোওয়েভের ব্যবহার
- পৃথিবীর যেকোনো দুটি প্রান্তে কম খরচে খুব তাড়াতাড়ি যোগাযোগ করা যায়।
- টেলিভিশন চ্যানেলগুলো তাদের বিভিন্ন প্রোগ্রাম স্যাটেলাইটের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী সম্প্রচার করতে পারে।
- দূর্যোগ ব্যবস্থাপনায় দ্রুত যোগাযোগ করার জন্য স্যাটেলাইট ফোন ব্যবহার করা যায়।
- আন্তঃমহাদেশীয় দূরবর্তী টেলিফোন কলের জন্য স্যাটেলাইট মাইক্রোওয়েভ প্রযুক্তি ব্যবহার করা যায়।
- আবহাওয়ার সর্বশেষ অবস্থা পর্যবেক্ষণে স্যাটেলাইট ব্যবহার করা যায়।
- স্যাটেলাইট এর সাহায্যে GPS (Global Positioning System) যেকোনো স্থানের অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশ বের করে দেয়।
- কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের জন্য স্যাটেলাইট মাইক্রোওয়েভ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়।
স্যাটেলাইট মাইক্রোওয়েভের অসুবিধা
স্যাটেলাইটটি পৃথিবী থেকে অনেক উঁচুতে তাই সেখানে সিগনাল পাঠানোর জন্য অনেক বড় অ্যান্টেনার দরকার হয়।
পৃথিবী থেকে যে সিগনাল পাঠানো হয় সেটি ওয়ারলেস সিগনাল এবং যদিও সেটি আলোর বেগে যায় তারপরেও এই বিশাল দূরত্ব অতিক্রম করতে একটু সময় নেয়।
ফলে ধীর গতিতে ডেটা আদান প্রদান করে। তাই টেলিফোনে কথা বললে অন্য পাশ থেকে কথাটি সাথে সাথে না শুনে একটু পরে শোনা যায়।
সর্বশেষ
মাইক্রোওয়েভ কি বা মাইক্রোওয়েভ কাকে বলে এ বিষয়ে আশা করি আজকের আর্টিকেলে আপনারা সম্পূর্ণ জানতে পেরেছেন।
এছাড়াও মাইক্রোওয়েভ এর বৈশিষ্ট্য, মাইক্রোওয়েভ এর সুবিধা ও অসুবিধাসমূহ এই আর্টিকেলে তুলে ধরা হয়েছে।
যদি আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লাগে তাহলে সোশ্যাল মিডিয়ায় অবশ্যই শেয়ার করবেন।
অবশ্যই পড়ুন: