অন্তবর্তীকালীন সরকার গত কয়েক দিন ধরে বাংলাদেশে একটি বহুল আলোচিত নাম বা বিষয়, কিন্তু অধিকাংশই জানে না আসলে অন্তবর্তীকালিন সদকার বলতে কি বোঝানে হয়েছে বা এটির সঙ্গাটা আসলে কি? তো চলুন জেনে নেওয়া যাক অন্তবর্তীকালিন সরকারটা কি? এবং বাংলাদেশের সংবিধানে এটি কোন স্থান আছে কিনা ..
অন্তবর্তীকালীন সরকার বা ক্যারেকার সরকার (Caretaker Government) একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বিষয়, বিশেষ করে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, এবং ভারতসহ বেশ কয়েকটি দেশের প্রেক্ষাপটে। একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সাধারণত একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ক্ষমতায় আসে, মূলত নতুন নির্বাচন পর্যন্ত রাষ্ট্রের প্রশাসনিক কাজ পরিচালনা করার জন্য। তবে প্রশ্ন থেকে যায়, এই ধরনের সরকার কি বৈধ নাকি অবৈধ?
আরো পড়ুন
ছাত্রদের কোটা বিক্ষোভ ২০২৪ সাল প্রেক্ষাপট, ঘটনা ও প্রভাব
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মূল ধারণা
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সাধারণত এমন একটি সরকারকে নির্দেশ করে, যা পূর্ববর্তী সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর এবং নতুন নির্বাচনের পূর্ব পর্যন্ত প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা করে। এই সরকারের প্রধান কাজ হলো একটি সুষ্ঠু, অবাধ, এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করা, যাতে ক্ষমতার হস্তান্তর গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হয়।
বৈধতার প্রশ্ন
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বৈধতা নিয়ে বিতর্ক আছে। একদিকে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অনেকেই গণতন্ত্রের রক্ষক হিসেবে দেখে, বিশেষত সেই সময়ে যখন বিদ্যমান সরকার নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় প্রভাব খাটানোর আশঙ্কা থাকে। এই ধরনের সরকারকে গণতন্ত্রের সার্বভৌমত্ব রক্ষার একটি মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
বাংলাদেশের উদাহরণে, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, যা সে সময়ের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে সহায়ক ছিল। তবে ২০১১ সালে বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ব্যবস্থার বিলুপ্তি ঘটানো হয়, যখন সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে এই ব্যবস্থা তুলে দেওয়া হয়।
অন্যদিকে, সমালোচকরা বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংবিধানের নিয়মিত ধারা থেকে বিচ্যুত। তাদের মতে, একটি নির্বাচিত সরকারকে তার মেয়াদ পূর্ণ করতে দেওয়া উচিত এবং নির্ধারিত প্রক্রিয়ায় ক্ষমতা হস্তান্তর হওয়া উচিত। তারা আরও যুক্তি দেন যে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মধ্যে ক্ষমতার অপব্যবহার বা জবাবদিহিতার অভাব থাকার সম্ভাবনা থাকে, কারণ এই সরকার সরাসরি জনগণের কাছে জবাবদিহি করে না।
বৈধতা নির্ধারণের উপাদান
১. সংবিধান ও আইন: কোন দেশের সংবিধান এবং আইনি কাঠামো অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অনুমোদন দেয় কিনা, সেটি তার বৈধতা নির্ধারণের প্রধান উপাদান। বাংলাদেশে ২০১১ সালের পর থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ধারণা বৈধতা হারায়, কারণ তা সংবিধান অনুযায়ী অবৈধ হয়ে যায়।
২. রাজনৈতিক চুক্তি ও সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা: অনেক ক্ষেত্রে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে একটি চুক্তির ফল হতে পারে। যদি সমস্ত বড় রাজনৈতিক দল এটি মেনে নেয়, তাহলে এর বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন কম উঠে।
৩. আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট: কোন দেশ বা আন্তর্জাতিক সংস্থা যদি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে স্বীকৃতি দেয়, তবে তার বৈধতা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হতে পারে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ত্রর বৈধতা একটি জটিল এবং বিতর্কিত বিষয়। এটি নির্ভর করে সেই দেশের সংবিধান, আইনি কাঠামো, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এবং জনগণের ইচ্ছার উপর। কিছু ক্ষেত্রে, এটি গণতন্ত্র রক্ষার একটি মাধ্যম হিসেবে কাজ করতে পারে, আবার কিছু ক্ষেত্রে এটি একটি অবৈধ ক্ষমতার হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে। সুতরাং, এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হলে প্রতিটি ক্ষেত্রে আলাদা করে বিশ্লেষণ করা জরুরি।
শেয়ার করুন: