কুরবানি বা কোরবানি হলো ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। মুসলিম উম্মাহ প্রতি বছর ইদ-উল-আজহা উপলক্ষে এই ইবাদত পালন করে থাকে। কুরবানি করার মাধ্যমে মুসলমানরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করে এবং আল্লাহর কাছে তাদের ত্যাগের নিদর্শন প্রদান করে। কুরবানি করার জন্য কিছু নির্দিষ্ট শর্ত ও নিয়ম রয়েছে যা প্রতিটি মুসলমানের জানা এবং মেনে চলা উচিত। নিচে কোরবানির শর্ত ও নিয়ম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
কুরবানির শর্তসমূহ
১. মুসলমান হওয়া: কুরবানি শুধুমাত্র মুসলমানদের জন্য নির্ধারিত। একজন মুসলিম ব্যক্তি, নারী বা পুরুষ, কুরবানি করতে পারেন।
২. বালিগ হওয়া: কুরবানি করার জন্য বয়সের সীমা থাকা উচিত। প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি কুরবানি করবেন, এবং এটি সাধারণত ১৫ বছর বা তার বেশি বয়সে হয়।
৩. মুকীম হওয়া: যারা স্থায়ীভাবে বাস করছেন, তাদের জন্য কুরবানি করা বাধ্যতামূলক। মুসাফির (ভ্রমণরত) ব্যক্তিদের জন্য এটি বাধ্যতামূলক নয়।
৪. নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকা: যারা নিসাব পরিমাণ সম্পদ বা সম্পত্তি মালিকানাধীন রাখেন, তাদের কুরবানি করা বাধ্যতামূলক। নিসাব হলো নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদ যা যাকাতের জন্যও নির্ধারিত।
৫. কুরবানির সময় নির্ধারণ: কুরবানির নির্দিষ্ট সময় হলো ঈদুল আযহার প্রথম দিন থেকে তৃতীয় দিন পর্যন্ত। এই সময়ের মধ্যে যে কোনো দিন কুরবানি করা যায়।
কুরবানির নিয়মাবলী
১. উপযুক্ত পশু নির্বাচন: কুরবানির জন্য গরু, ছাগল, ভেড়া, উট ইত্যাদি পশু নির্বাচন করতে হয়। পশু অবশ্যই সুস্থ ও নির্দিষ্ট বয়সের হতে হবে। – গরু ও উট: কমপক্ষে দুই বছর বয়সের হতে হবে। – ছাগল ও ভেড়া: এক বছর বয়সের হতে হবে। তবে ছাগল ও ভেড়া ছয় মাসের হলে এবং দেখতে বড় হলে তা কুরবানি করা যেতে পারে।
২. পশুর সুস্থতা: কুরবানির জন্য পশু সুস্থ ও স্বাস্থ্যবান হওয়া আবশ্যক। চোখ, কান, শিং, পা ইত্যাদির কোনো স্থায়ী ক্ষতি বা ত্রুটি থাকা চলবে না।
৩. নিয়্যাত: কুরবানি করার সময় আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিয়্যাত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিয়্যাত হৃদয় থেকে করতে হবে এবং তাতে খাঁটি মনোভাব থাকতে হবে।
আরো পড়ুন
সুলতান সুলেমানের সবচেয়ে বড় বিজয়গুলো
সুলতান সুলেমান দ্য ম্যাগনিফিসেন্ট
৪. যবেহর সময়: যবেহ করার সময় ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবর’ বলে আল্লাহর নামে যবেহ করতে হবে। এটি ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত।
৫. পশুর রক্ত পুরোপুরি নিষ্কাশন: যবেহ করার পর পশুর রক্ত পুরোপুরি নিষ্কাশন করা জরুরি। রক্ত পুরোপুরি বের না হলে মাংস হালাল হবে না।
৬. মাংসের বণ্টন: কুরবানির মাংস তিন ভাগে ভাগ করা হয়: –
**নিজের জন্য: এক ভাগ নিজের পরিবারের জন্য রাখতে হবে। –
**আত্মীয় ও বন্ধুদের জন্য: এক ভাগ আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুদের মধ্যে বিতরণ করতে হবে। –
**দরিদ্র ও অভাবী ব্যক্তিদের জন্য: এক ভাগ দরিদ্র ও অভাবী ব্যক্তিদের মধ্যে বিতরণ করতে হবে।
৭. কুরবানির পশুর চামড়ার ব্যবহার: কুরবানির পশুর চামড়া বিক্রি করা যাবে না। এটি সাদাকা হিসেবে দান করতে হবে অথবা নিজের কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে।
কুরবানি একটি মহৎ ইবাদত যা আল্লাহর প্রতি ত্যাগ ও আনুগত্য প্রদর্শনের উপায়। কুরবানি করার সময় কোরবানির শর্ত ও নিয়ম মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি শুধু আমাদের আত্মিক উন্নতির জন্য নয়, বরং সামাজিক উন্নয়নের জন্যও গুরুত্ব বহন করে। কুরবানির মাধ্যমে আমরা দরিদ্র ও অভাবী মানুষের সঙ্গে সুখ ও সমৃদ্ধি ভাগাভাগি করতে পারি, যা ইসলামের মূল আদর্শ।